স্টাফ রিপোর্টারঃ
সাভার থেকে এসে রাজধানীর নিউমাকের্ট এলাকায় অপহরণের নাটক সাজিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা দাবির অভিযোগে প্রতারক মা ও মেয়েসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার রাতে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- বিথী হাওয়া ওরফে বিবি হাওয়া (৩৮) ও তার মেয়ে সুরভী সুলতানা (২০)। তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী, তারা সাভার পৌর এলাকার বাজার রোডের বাসিন্দা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে নিউমার্কেট থানায় ৭ এপ্রিল একটি মামলা করেন নিউমার্কেট থানাধীন মিনিতা প্লাজা নামক শপিং সেন্টারে একটি ঘড়ির দোকানদার সৈকত আলী। গ্রেপ্তারকৃত বিথী ও সুরুভী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে সৈকতের দোকানে ঘড়ি ক্রয় করতে আসলে তাদের সঙ্গে সৈকতের স্ত্রীর পরিচয় হয় ও সৈকতের স্ত্রীকে নিজের মেয়ে বলে সম্বোধন করে। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে তারা যোগাযোগ স্থাপন করে। গত ২০ মার্চ সৈকতের দোকানে বিথী আসে এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ তাই তার মেয়ে সুরভীকে সেলসম্যান হিসেবে তার দোকানে কাজে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সৈকত সরল বিশ্বাসে সুরভীকে কাজে নেয়। কিন্ত সুরভীর আচরণ সন্দেহজনক হওয়ার সৈকত তাকে দোকানে আসতে নিষেধ করে। গত ২২ মার্চ নিষেধ করার পরও সুরভী দোকানে আসে এবং অসুস্থতার কথা বলে কিছু সময় পর চলে যেতে চাইলে বিকালে সৈকত সুরভীকে বাসে তুলে দেন। ওই দিন রাত অনুমানিক ৮টায় বিথী মোবাইল ফোনে সৈকতকে জানায় তার মেয়ে সুরভী এখনও বাসায় পৌঁছেনি এবং তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর কিছু সময় পর বিথী মোবাইল ফোনে তাকে জানায় তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে এবং অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। যেহেতু সুরভী তার দোকানে কাজ করতে গিয়ে হারিয়েছে তাই তার মেয়েকে উক্ত মুক্তিপণের টাকা দিয়ে উদ্ধার করে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
পরবর্তীতে দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২ টার দিকে সুরুভী সৈকত ও তার স্ত্রীকে জানায় সে কৌশলে পালিয়ে এসেছে। এসময় অপরিচিত ফোন থেকে কল করে সৈকতের স্ত্রীকে জানানো হয় সুরভীর মাকে অপহরণকারীরা আটক করে রেখেছে এবং সে যদি আসে তাহলে তাকে নিয়ে সুরভীর মাকে উদ্ধার করা যাবে। সৈকতের স্ত্রী ঘটনাস্থলে যেতে না চাইলে তাকে ফোন করে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদান করা হয় ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। তাছাড়া টাকা না দিলে সৈকতের ব্যবসার ক্ষতি হবে বলে হুমকি প্রদান করা হয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, মামলা রুজুর পর থানার একটি টিম দ্রুত তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করে এবং নিউমাকের্ট থানাধীন এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিথী হাওয়া ওরফে বিবি হাওয়া ও সুরভী সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা উক্ত ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে নিউমাকের্ট থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া চক্রটির সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিথী হাওয়া ওরফে বিবি হাওয়া (৩৮) ও তার মেয়ে সুরভী সুলতানা (২০) মিলে ২০২৩ সালের ১৮ই জুন সাভার পৌরসভার শাহীবাগ এলাকার সাব্বির নামে এক যুবককের বিরুদ্ধে মেয়েকে হত্যার চেষ্টার নাটক সাজিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পারলে মা ও মেয়েকে আটক করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। পরবর্তীতে এমন প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না মর্মে মুচলেকায় ছাড়া পায় তারা।
এছাড়াও ২০২২ সালের শেষে সাভার উপজেলার শিমুলিয়া এলাকার বাসিন্দা দেশ বরেণ্য আলেম হযরত মাওলানা কাজী ইসরাফিল হোসাইন সাভারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন স্বামী পরিত্যাক্তা বিথী হাওয়া ওরফে বিবি হাওয়া (৩৮)। মাওলানা কাজী ইসরাফিল হোসাইন সাভারী ওই নারীর দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে কথিত ধর্ষণের নাটক সাজায় বিথী হাওয়া ওরফে বিবি হাওয়া (৩৮) ও তার মেয়ে সুরভী সুলতানা (২০)। এতে সমাজে নানা ধরনের কথা শুনতে হয়েছে মাওলানা কাজী ইসরাফিল হোসাইন সাভারীকে। তবে এবার আর তাদের শেষ রক্ষা হলো না, রাজধানীর নিউমাকের্ট থানার মামলায় যেতে হলো কারাগারে।