স্টাফ রিপোর্টারঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মনোয়ার হোসেন পলাশ (২০) নামে আশুলিয়ার এক কলেজ ছাত্রকে সাভারে ডেকে এনে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে মারধর ও উলঙ্গ করে নগ্ন ভিডিও ধারণের পর চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৩১মার্চ) পবিত্র ঈদের দিন সন্ধ্যায় সাভার পৌরসভার মুক্তির মোড় তারাপুর মহল্লার প্রবাসী সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্বামী ও স্ত্রী পরিচয়ে ৭ তলা ভবনের একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এসব অপকর্ম করে আসছিল বলে জানা গেছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওই বাড়ির কেয়ারটেকার মো. ইমন। তবে তার দাবি, তাদের অগোচরেই এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল এই চক্রটি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মনোয়ার হোসেন পলাশের মা পারুল আক্তার বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় এক নারীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ চক্রের মূল হোতাকে আটক করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।
শনিবার (৫ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে সাভার পৌরসভার মুক্তির মোড় তারাপুর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হচ্ছেন- সাভারের আনন্দপুর এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে সাজেদুল ইসলাম সাদ (২৫) ও চট্টগ্রাম জেলার মানিকছড়ি গ্রামের সৈয়ত মোহাম্মদ ইসমাইলের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে মায়া। তারা দুজনেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ৭ তলার একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে জিম্মি করে বাণিজ্য করে আসছিল।
এ ঘটনার সাথে জড়িত জিহাদ ও সৌরভ নামে অপর দুই সহযোগী পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী মনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, তিনি ঢাকা জেলার আশুলিয়ার ভাদাইল দক্ষিণপাড়া এলাকার প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে এবং আশুলিয়ার সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। কয়েকদিন আগে জান্নাতুল ফেরদৌস মায়ার সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথাবার্তা ও ছবি আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ৩১ মার্চ ঈদের দিন বিকালে জান্নাতুল দেখা করার জন্য তাকে সাভারের মুক্তির মোড়ে আসতে বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে সাভার মুক্তির মোড় এলে জান্নাতুল ও সাজেদুল ইসলাম সাদসহ ৩-৪ জন লোক তাকে অপহরণ করে পাশের একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গামছা দিয়ে হাত-পা এবং ওড়না দিয়ে চোখ বেঁধে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে মারধর শুরু করে। পরবর্তীতে নগদ ৫ হাজার ৬০০ টাকাসহ পরিবারের কাছে বিকাশের মাধ্যমে ২৬ হাজার টাকা আদায় করে। অবশিষ্ট টাকা দেওয়ার শর্তে নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ঐদিন রাতে পাকিজা এলাকায় ফেলে রেখে যায় চক্রটি।
এ সময় ১ লাখ টাকা মূল্যের স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ২০-৫জি মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয় তারা। অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পথচারীরা। পরবর্তীতে সেই নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুঠোফোনে কল করে অবশিষ্ট টাকা দাবি করে আসছিল অভিযুক্তরা।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।